
ছোট বেলা সংবাদপত্রে পড়েছিলাম আফ্রিকাতে নাকি একটা প্রবাদ
প্রচলিত আছে আত্নহত্যা করার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় সিংহের লেজে দড়ি বেধেঁ, দড়িটা নিজের
কোমরে বেধেঁ দড়িতে টান দেয়া । বন্ধুদের সাথে মজা করে বলতাম কেউ আত্নহত্যা করলে এভাবে
যেন করে । যাই হোক শুরুতেই আপনাদের সাথে মজা করলাম ।সেই বয়সে আত্নহত্যা বিষয় তেমন
কোন ধারনা ছিল না তাই বন্ধুদের আত্নহত্যা করার উপায় বলেদিতাম। সবাই বলে জীবনের মৈলিক
চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র , বাসস্থান কিন্তু আমার
মনে হয় প্রতিটি জীবের প্রধান চাহিদা পৃথিবীতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা , তাই প্রতিনিয়ত
বেঁচে থাকার যুদ্ধে নিয়োজিত সবাই । আর এই বেঁচে থাকার সংগ্রাম থেকে সরে আসা কেউ কেউ
আত্নহত্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে , যা আমাদের কাম্য নয় । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে সড়ক
দূঘর্টনার পর আত্নহত্যার মাধ্যমে মৃত্যূহার সবচাইতে বেশি । আমাদের পরিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়ে
আত্নহত্যার মাধ্যমে মৃত্যূহার অন্যান্য মৃত্যূহারের (রাজনৈতিক কোন্দল,সড়ক দূঘর্টনা,অসুস্থতা)
তুলনায় অনেক বেশি ।আত্নহত্যার কারণ হিসাবে স্বাভাবিকভাবে আমাদের সামনে পারিবারিক কোন্দল,প্রেমে ব্যর্থতা,
বেকারত্ব,অর্থনৈতিক মন্দা দৃশ্যত হলেও এর আড়ালে থাকে কিছু মানসিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা
। সামাজিক দ্বন্দ্ব ,মানসিক অশান্তি ,হতাশা,বিষন্নতা ও ব্যক্তিত্ব গোলোযোগ আত্নহত্যার প্রবণতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণে । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০% ছাত্র
ছাত্রীর মধ্যে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা রয়েছে এরমধ্যে ৩৫% মৃদু,১২% মাঝারি,৭% তীব্র হতাশা
ও বিষন্নতায় ভোগে যাদের আত্নহত্যার প্রবণতা তীব্র । APA এর মতে ৮০% আত্নহত্যার কারণ
তীব্র বিষন্নতা । বিষন্নতা Depression ব্যক্তির অভ্যান্তরীণ পীড়াদায়ক অবস্থা (Mental
health Disorder) এটি মস্তিষ্কে মধ্যে রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা তৈরী করে যার ফলে হতাশা,
ক্লান্তি অথবা জীবনের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয় । তীব্র বিষন্নতা ইন্দ্রিয়কে একটি বিষয়
কেন্দ্রিক করে তোলে । যার ফলে ব্যাক্তি জীবনের
স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে এবং একজন মানুষ আশাহীন হয়ে পড়ে । শৈশবকালে যাদের
পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশ হয় না তাদের মধ্যে পরবর্তীকালে অধিক পরিমানে হতাশা ও বিষন্নতা
লক্ষ করা যায় । আমাদের দেশের অধিকাংশ মা বাবার সন্তান লালন পালনে রয়ে গেছে বদ্ধমূল
ধারণা, যার ফলে শৈশবে পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশ
হচ্ছে না , তৈরী হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ।আমি মনে করি পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ও পরিবর্তিত সময়ের সাথে মিল রেখে সন্তান লালন পালন এর ধরণ সামঞ্জস্যপূর্ণ
হওয়া দরকার । এ সময়ের মা বাবা , শৈশবে যে পরিবেশে লালিত পালিত হয়েছেন , আর এখনকার পরিবেশ
অনেকটাই আলাদা তাই এখনকার মা বাবারা যদি তাদের বাবা মায়ের আচরণ অনুকরণ করেন,তাহলে হবে
সবচাইতে বড় ভুল । আমি মা বাবা কে বলবো , আপনি যে পরিবেশে বড় হয়েছেন আপনার সন্তান কিন্তু
সেই পরিবেশে বড় হচ্ছে না কারন সময়টাই বদলে গেছে । তাই সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ
সম্পর্ক গড়ে তুলুন, সন্তানের সাথে এক সমতলে
বসে কথা বলুন ( যা আপনাকে সন্তানকে বুঝতে সহায়তা করবে ), সন্তানের আগ্রহ, খারাপ লাগাকে
জানুন, সন্তানকে সিদ্ধান্ত গ্রহনে সহায়তা করুন ।এ ছাড়া শৈশবের কোন দূঃসহ স্মৃতি , বাবা মা এর মৃত্যু ,
মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে । আমাদের গণমাধ্যম গুলোর কথা বলতে গেলে বলতে হয়
'প্রচারেই প্রসার ' , নিয়ন্ত্রনহীন আত্নহত্যার প্রচারনা আমাদের পরিবেশটাকে করে তুলছে
আরো আত্নহত্যা প্রবণ । Attention taking Disorder ৭% যাদের মধ্য রয়েছে তারা শুধু মাত্র
অন্যর মনোযোগ আকৃষ্ট করার জন্য আত্নহত্যার প্রচেষ্টা নিতে গিয়ে মারা যাচ্ছে । আকাশ
সংস্কৃতির প্রভাবও আমাদের পরিবেশকে আত্নহত্যা
প্রবণ করে তুলছে খানিকটা ,বাজারে কাটতি বাড়ানোর জন্য অনুষ্ঠান গুলোতে জীবন্ত মানুষ
কে সহজে মৃত ও মৃত মানুষ কে জীবিত করা হচ্ছে এবং এর দায় ভার এড়াতে অনুষ্ঠানের আগে ও
পরে লেখা হচ্ছে ‘এই অনুষ্ঠান এর চিকিৎসা
সংকান্ত বিষয় ও আইনী জটিলতা সম্পূর্ণ কাল্পনিক’। মানুষ যখন কোন নাটক বা সিনেমা দেখে তখন সে অভিনেতা
বা অভিনেত্রীর সাথে নিজেকে Identification করে ফেলে ,তাই কোন অভিনেত্রী আত্নহত্যার
প্রচেষ্টার পর জীবিত হতে দেখলে ,অনেক মানসিক ক্রটি সম্পূন ব্যাক্তি আত্নহত্যা করতে
পারে ।সেজন্য আমি কাউকে টিভি দেখতে নিষেধ করছি না , আমাদের দেশীয় চ্যনেল গুলোর কাছে
অনুরোধ অনুষ্ঠান গুলো যেন বিনোদন নির্ভর হয়
এবং ভাল কোন Message সবার কাছে পৌচ্ছাঁয় । কোন গণমাধ্যম যখন একটা বিষয় প্রচার করে,
সে বিষয়টি অনেকের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাই এমন কিছু প্রচার করা উচিত নয় যার মাধ্যমে
আমাদের সমাজের ক্ষতি সাধন হতে পারে ।ছেলে মেয়েদের মোবাইল ফোনে দূর আলাপনের ফলে একে
অপরের মধ্যে মানসিক নির্ভরশীলতা বেড়ে যাচ্ছে , হঠাৎ এতে ব্যাঘাত ঘটলে তীব্র মানসিক
পীড়নের সৃষ্টি হতে পারে , যাদের পীড়ন সহনশীলতা কম (শৈশবে ত্রুটিপূর্ণ মানসিক বিকাশ
হয়েছে ) তারা আত্নহত্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে ।এতে মেয়েদের পরিমান বেশি কারন মেয়েরা নিজেদেরকে ছেলেদের চেয়ে অনেকটা দুর্বল ভাবে। এছাড়াও মেয়েদের আবেগ অনেক বেশি। তারা তাদের মানসিক সমস্যাগুলো নিজেদের মধ্যে চেপে রাখে অর্থাৎ বাইরে প্রকাশ করতে চায় না । ফলে মানসিক চাপ যখনমাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় তখন তারা সেটা সহ্য করতে পারে না। এর ফলে তাদের প্রতিরক্ষা কৌশল ভেঙ্গে পড়ে এবং সমাধান হিসেবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়’’।নিজেদেরকে ছেলেদের চেয়ে অনেকটা দুর্বল ভাবে। এছাড়াও মেয়েদের আবেগ অনেক বেশি। তারা তাদের মানসিক সমস্যাগুলো নিজেদের মধ্যে চেপে রাখে অর্থাৎ বাইরে প্রকাশ করতে চায় না ।ফলে মানসিক চাপ যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় তখন তারা সেটা সহ্য করতে পারে না। এর ফলে তাদের প্রতিরক্ষা কৌশল ভেঙ্গে পড়ে এবং সমাধান হিসেবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়’’।যারা জীবনটাকে খেলা মনে করছেন , কল্পনাবিলাসী
হয়ে আত্নহত্যা করতে ইচ্ছা করে তাদের বলছি আপনি হয়ত জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন,
কিন্তু জীবনটা কি শুধু আপনার ? একটি বার আলাদা করে ভাবুন , আপনার Root টা কোথায়? আমি
বলবো পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই কোন না কোন দায়িত্ব নিয়ে এসেছে তাই নিজের দায়িত্বটা বুঝে
নেওয়া সবচাইতে বুদ্ধিমানের কাজ । সবাই ভাল থাকুন...........
No comments:
Post a Comment